Header Ads Widget

আমরা যদি ব্যর্থ হই, তবে কোনো সংস্কার টিকবে না: প্রধান বিচারপতি

 


ডেক্স নিউজ

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ শনিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন শীর্ষক সম্মেলনে বাংলাদেশ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে, তখন বিচার বিভাগকে নীতিতে স্থির হওয়ার জোর দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে কোনো সংস্কার টিকবে না।আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন বর্তমান সংবিধান ত্রুটিপূর্ণ হলেও এটি বিচার বিভাগের বৈধতার একমাত্র ভিত্তি।গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক ওই সম্মেলন আয়োজন করেছে। চতুর্থবারের মতো আয়োজিত তিন দিনের ওই সম্মেলনে ৮৫টি দেশের দুই শর বেশি প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আমাদের নাগরিক জাগরণ ছিল বিরল স্বচ্ছতার এক মুহূর্ত। এটি বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের বিন্যাসকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছিল। এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক আচার নয়, কোনো বংশগত অলংকারও নয়। এটি সেই নৈতিক স্থাপত্য, যা বৈধতাকে সুরক্ষিত করে এমন এক বিশ্বে, যেখানে বৈধতাই ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে।তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান লক্ষণীয়ভাবে আইনের শাসনের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয় না; বরং এটি তার দিকে ইঙ্গিত করে—অধিকার, নিয়ন্ত্রণ ও শাসিতদের মর্যাদার মাধ্যমে। এটিকে ঘাটতি বলা চলে না। বরং এটি সচেতনভাবে মনে করিয়ে দেয় যে আইনের শাসন হলো সংবিধানের নৈতিক পাঠ, যা ন্যায়, যুক্তি এবং জনগণের সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।জুলাই বিপ্লব সংবিধানের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক বিশুদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিল মন্তব্য করে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সাড়াদানের ক্ষমতা—এই তিনটি গুণ হয়ে উঠেছিল জনসচেতনতার মূল সুর। অনিশ্চিত সেই মাসগুলোতে বিচার বিভাগ একমাত্র সম্পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে, একই সঙ্গে স্থির চিত্তে এবং দৃঢ় অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছিল।বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ শনিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশন শীর্ষক সম্মেলনে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ শনিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশন শীর্ষক সম্মেলনে অভ্যুত্থানে পর সংস্কারের জন আকাঙ্ক্ষার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতা নিয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। ভবিষ্যৎ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন শুধু কাঠামোই নয়, এমন প্রেক্ষাপটও উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে পারে, যার সঙ্গে বর্তমান রূপান্তরকালীন মুহূর্তের খুব বেশি সাদৃশ্য না–ও থাকতে পারে। রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পুনর্বিন্যাস একটি নতুন সামাজিক চুক্তি—হয়তো একটি নতুন সাংবিধানিক ধারা যুক্ত করতে পারে।এমন মুহূর্তে বিচার বিভাগ তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হবে—কীভাবে এই বৃহত্তর পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সংবিধানের মূল চেতনা না হারিয়ে যাতে এগিয়ে যাওয়া যায়। দৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও সাহস—এই তিন গুণ নির্ধারণ করবে বিচার বিভাগ দ্রুত পরিবর্তিত রাষ্ট্রে কতটা প্রাসঙ্গিক থাকতে পারে,’ বলেন প্রধান বিচারপতি।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো রকম অলংকার ব্যবহার না করেই আমাদের নির্জলা এই সত্যটা স্বীকার করে নিতে হবে যে বর্তমান সংবিধান যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক, যতই ইতিহাসের ক্ষত বহন করুক, এটি বিচার বিভাগের বৈধতার একমাত্র ভিত্তি। এর মৌলিক কাঠামো রাজনীতিতে যতই বিতর্কিত হোক না কেন, গত এক বছরে আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে। নির্বাহীর বাড়াবাড়ি, জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আইন প্রণয়নজনিত বিকৃতি কিংবা বিচার বিভাগের সীমা লঙ্ঘন—সব ক্ষেত্রেই আদালতকে বারবার ফেরত যেতে হয়েছে সেই অপরিবর্তনীয় নীতিগুলোর কাছে—ক্ষমতার পৃথক্‌করণ, বিচারিক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক শাসন, অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব যেগুলো সাংবিধানিক জীবনকে সম্ভব করে তোলে।জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসা সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, গত বছরের প্রতিটি রায়কে আইনি সিদ্ধান্ত এবং বীজ—উভয় হিসেবেই দেখতে হবে, যা রোপিত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উর্বর মাটিতে, এমন এক আশা নিয়ে যে এটি ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় সাংবিধানিক সংস্কৃতিতে রূপ নেবে। কিন্তু এখানে পরিহাসের বিষয় হলো যে যেখানে আদালত বিদ্যমান সংবিধানকে রূপান্তরকালীন ন্যায়ের নোঙর হিসেবে পুনরায় নিশ্চিত করছেন, জনগণ—যাঁদের হাতে রয়েছে মূল ক্ষমতা—তাঁরাই হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংবিধানকে পুনর্লিখন করতে পারেন। বিচার বিভাগকে এই দ্বৈততাকে হুমকি হিসেবে নয়, বরং গভীর গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।বাংলাদেশ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে, তখন বিচার বিভাগের নীতিতে স্থির থাকার ওপর জোর দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ তাই সূক্ষ্ম: বর্তমান সংবিধানের অখণ্ডতা রক্ষা করা—একই সঙ্গে মানসিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত হওয়া, জনগণ ভবিষ্যতে যা পুনর্নির্মাণ করতে পারে তার জন্য। আমরা যদি ব্যর্থ হই, তবে কোনো সংস্কার—যতই তা প্রশংসিত হোক—দুর্বল শাসন বা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষয়রোগ থেকে টিকবে না। কিন্তু যদি আমরা সাংবিধানিক নৈতিকতায় এবং আইনের শাসনের শৃঙ্খলায় অবিচল থাকতে পারি, তবে এই রূপান্তরকালীন মুহূর্ত অনিশ্চয়তার অধ্যায় হিসেবে নয়, বরং আমাদের সাংবিধানিক পুনর্জাগরণের সূচনা হিসেবে স্মরণীয় হবে।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার কথা মাথায় রেখে দক্ষিণ এশিয়াতে সবার অংশীদার হিসেবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগর ঘিরে একটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। আর বাংলাদেশ এখানে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বঙ্গোপসাগরের অপরিসীম সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এটিকে বিকাশ ও সমৃদ্ধির করিডরে রূপান্তর করতে হবে।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই যুগে তথ্য আর ক্ষমতার পরোক্ষ ফল নয়; এটি ক্ষমতার একটি হাতিয়ার। এআই, ডিপফেক, পরিকল্পিত ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, নজরদারি—এসবই কূটনীতি, গণতন্ত্র এবং শাসন ব্যবস্থাকে নতুন রূপে পুনর্গঠন করছে। বাংলাদেশ এই বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে প্রস্তুত, তথ্য ক্ষেত্রকে রক্ষা করতে এবং এমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রচার করতে, যা নিরাপত্তা ও অধিকার—উভয়কেই সুরক্ষিত রাখে।অনুষ্ঠানে সিজিএসের সভাপতি এবং সম্মেলনের চেয়ার জিল্লুর রহমান উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন। ধন্যবাদ বক্তৃতা দেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী।


Post a Comment

0 Comments